ইউরেশীয় অর্থনৈতিক ইউনিয়নভুক্ত (ইইইউ) দেশগুলোতে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্যগুলো শুল্কমুক্তভাবে প্রবেশের সুযোগ মিলতে পারে। ইইইউভুক্ত পাঁচ দেশ হচ্ছে রাশিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান, আর্মেনিয়া ও কিরগিজস্তান। রাশিয়া এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে তারা রাজি। তবে রাশিয়া একা রাজি থাকলেই হবে না, অন্যদেরও সম্মতি থাকতে হবে। বিশেষ করে অনুমোদন লাগবে ইউরেশীয় অর্থনৈতিক কমিশনের নির্বাহী কমিটির।
রাশিয়া বলেছে, ইইইউভুক্ত দেশগুলোতে শুল্কমুক্তভাবে পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশের উচিত হবে ইউরেশীয় অর্থনৈতিক কমিশনে আনুষ্ঠানিক আবেদন করা। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এ আবেদন করতেই পারে। যদিও বাংলাদেশকে এখনো ইইইউভুক্ত দেশগুলো শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়। তবে বাংলাদেশের প্রধান প্রধান রপ্তানি পণ্যে দেয় না। কমিশন অনুমোদন করলে তৈরি পোশাক, চামড়া, সিরামিক ইত্যাদি পণ্যের বড় বাজার হবে ইইইউভুক্ত দেশগুলো।
গত সপ্তাহে রাশিয়ার মস্কোতে অনুষ্ঠিত বাণিজ্য, অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও কারিগরি বিষয়ে বাংলাদেশ-রাশিয়া আন্তসরকার কমিশনের প্রথম বৈঠকে এসব কথা উঠে এসেছে। রাশিয়ার মস্কোতে অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপী বৈঠকটি শেষ হয় গত ২৪ অক্টোবর এবং ওই দিনই উভয় দেশের প্রটোকল সই হয়। প্রটোকলে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন রাশিয়া সফরে যাওয়া ১৪ সদস্যের প্রতিনিধিদলের প্রধান অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সদ্যবিদায়ী সচিব কাজী শফিকুল আযম এবং রাশিয়া ফেডারেশনের কৃষিবিষয়ক ডেপুটি মিনিস্টার আই ভি শেতাকভ।
ইআরডি সচিব কাজী শফিকুল আযম বলেন, ‘ইইইউভুক্ত দেশ, বিশেষ করে রাশিয়ার সঙ্গে অনেক বিষয়ে প্রটোকল সই হলো, এখন আমাদের কাজ হবে উদ্যোগটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আর এখনই উচিত হবে ইউরেশীয় অর্থনৈতিক কমিশনে শুল্কমুক্ত পণ্য রপ্তানির সুযোগের আবেদনটি করে ফেলা। এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভূমিকাই বড়।’
প্রটোকলে বলা হয়েছে, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হওয়ার বড় সুযোগ থাকলেও রাশিয়ার সঙ্গে ব্যাংক যোগাযোগই নেই বাংলাদেশের। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি আনতে সুষ্ঠু ব্যাংক লেনদেন জরুরি, যা বর্তমানে নেই। ফলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা রাশিয়াসহ সিআইএসভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা করতে অনেকটা নিরুৎসাহিত বোধ করেন। ব্যাংক লেনদেন চালু হলে তৃতীয় দেশ অর্থাৎ তুরস্ক, পোল্যান্ড—এসব দেশের ওপর আর নির্ভর করতে হবে না।
তবে আশার কথা হছেচ বাংলাদেশে শিগগিরই রাশিয়ার বাণিজ্যিক একটি ব্যাংক চালু হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে সম্ভাব্য ব্যাংকের নামও প্রস্তাব করেছে দেশটি। তা হচ্ছে ‘স্পুটনিক ব্যাংক’।
দুই দেশের সরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে চূড়ান্ত আলোচনা ও সমঝোতা চুক্তির পরপরই ব্যাংকটি কার্যক্রমে আসবে। এটি চালু হলে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার লেনদেন নির্বিঘ্নে করা সম্ভব হবে। তবে লেনদেনের মাধ্যম টাকা, রুবল না ডলার হবে-সেটি এখনও ঠিক হয়নি।
রাশিয়ার বাজার বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের জন্যে হাতছানি দিচ্ছে। বাংলাদেশের নিটওয়ার প্রস্তুতকারীরা রাশিয়ায় নতুন বাজার ধরতে আগ্রহী। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে চারদিন ব্যাপী ফেডারেল ট্রেড ফেয়ার ফর টেক্সটাইলে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের নিটওয়ার প্রস্তুতকারীদের সংগঠন বিকেএমইএ’র ১৩০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ওই ফেয়ারে অংশ নেয়।
রাশিয়ার ট্রেড ফেয়ারে অংশ নিয়ে কী ধরনের সাড়া পাওয়া গেছে- জানতে চাইলে সেলিম ওসমান বলেন, ওই চারদিনের মেলায় আমরা সরাসরি অর্ডার পেয়েছি ১১ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার। তিনি বলেন, সম্প্রতি আমরা রাশিয়ার বাজার পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, এটা ইউরোপের চেয়েও অনেক বড় বাজার।