বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে দুই প্যানেলের লড়াই। দেশের তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের এই শীর্ষ সংগঠনের দ্বিবার্ষিক নির্বাচন আগামী ৪ এপ্রিল ভোটগ্রহণ। ভোটে পুরনো দুই প্যানেলে ভাগ হয়ে নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাঠে নেমেছেন সংগঠনটির সদস্যরা। গত ৪ মার্চ প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর, ঘটা করে প্যানেল পরিচিতি অনুষ্ঠান ও দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে সরগরম হয়ে উঠছে নির্বাচনের মাঠ।
এবারের বিজিএমইএর আসন্ন দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে:
বর্তমান সভাপতি রুবানা হকের প্যানেল ‘ফোরামের’ নেতৃত্ব দিচ্ছেন হান্নান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম শামসুদ্দিন মিয়া। রুবানা নিজেও তার প্যানেল থেকে নির্বাচনে থাকছেন। অন্য দিগে বিজিএমইএর সাবেক সহ-সভাপতি ও জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক হাসানকে প্যানেল লিডার করেছে সম্মিলিত পরিষদ।
‘সমঝোতার মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের সংস্কৃতি’ থেকে বেরিয়ে আসার দাবি নিয়ে ২০১৯ সালে ‘স্বাধীনতা পরিষদ’ নামের নতুন প্যানেল গঠন করা ডিজাইন অ্যান্ড সোর্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম এর আগে পূর্ণ প্যানেল নিয়ে নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও এখন সম্মিলিত পরিষদের সঙ্গে একীভূত হয়ে নির্বাচন করছেন।
এবারের নির্বাচনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সমিতির ৩৫টি পরিচালক পদের জন্য দুই প্যানেলের ৩৫ জন করে মোট ৭০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৪ এপ্রিল ঢাকায় হোটেল র্যা্ডিসন ব্লুতে এবং চট্টগ্রামে বিজিএমইএর আঞ্চলিক কার্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ নির্বাচনের ভোট হওয়ার কথা।
চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ঢাকা অঞ্চলে ১ হাজার ৮৫৩ জন এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৪৬১ জন ভোটার রয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁয়ে সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল নেতা ফারুক হাসান আগামী ৪ এপ্রিল ২০২১-২০২৩ বিজিএমইএ-এর নির্বাচন উপলক্ষে ১৭ দফা বাস্তবায়নের অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে।
ইশতেহারে কোভিড-১৯ মোকাবেলা ও শিল্প পুনরুদ্ধার, ক্ষুদ্র ও মাঝারি পোশাক শিল্পের উন্নয়ন, নতুন বাজার তৈরি এবং ব্যাংকিং নীতিমালা সংস্কারসহ ৮১টি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।
ফারুক হাসান বলেন, যদি আমরা নির্বাচিত হতে পারি, সরকার ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে কার্যকরী আলোচনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যেন এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পরেও কমপক্ষে ২০৩১ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত পণ্য রপ্তানী সুবিধা অব্যাহত রাখা যায়।
তিনি বলেন, নতুন বাজারে পোষাক রপ্তনির জন্য প্রণোদনা চার শতাংশ থেকে পাঁচ শতাংশে উন্নীত করবো। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রোড শো’র আয়োজন- দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ল্যাটিন আমেরিকা, ভারতসহ সম্ভাবনাময় নতুন বাজারগুলোতে রোড শো আয়োজন এবং গুরুত্বপূর্ণ মেলাগুলোতে বিজিএমইএ সদস্যদের অংশগ্রহন নিশ্চিত করা হবে।
ফারুক হাসান আরো বলেন, বিশ্ববাজারে পোশাকের ইমেজ সংকট রয়েছে। ইমেজ বৃদ্ধি করাই হবে আমার আসল কাজ। এছাড়া রপ্তানি কীভাবে বাড়ানো যায় অর্থাৎ মার্কেট শেয়ার বাড়ানোর বিষয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে।
তিনি আরও যোগ করেন যে তারা এশীয় অঞ্চলের টেকসই টেক্সটাইলকে (স্টার) ফরোয়ার্ড করবেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোষাক শিল্পের শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে শক্তিশালী লবিস্ট নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ইশতেহার দেয়া বড় বিষয় নয়, মুল বিষয় হলো- পোশাক শিল্পে যখন যেই সমস্যা হবে তা মোকাবিলা করে এই শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
ইশতেহারে ব্যবসায়ী, শ্রমিকদের স্বার্থ অক্ষুন্ন রাখা, দাপ্তরিক বিভিন্ন সমস্যা ও কাস্টমস কেন্দ্রিক সমস্যা সমাধানেরও আশ্বাস দেয়া হয়। ঢাকা অঞ্চলে ২৫ জন ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য ৯ জনসহ মোট ৩৪ জন সদস্যকে নিয়ে প্যানেল ঘোষণা করে সম্মিলিত পরিষদ।
রোববার (১৪ মার্চ, ২০২১) সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লুতে আয়োজিত ‘ফোরাম পর্ষদের পরিচিতি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে পোশাক খাতের উন্নয়নে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার শপথ করেছেন বিজিএমইএ নির্বাচন-২০২১’এ ফোরাম মনোনীত সব প্রার্থী।
দেশের পোশাক ব্যবসায়ীদের শীর্ষ জোট ফোরামের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিজিএমইএ’কে আরো শক্তিশালী করতে এ.বি.এম. সামছুদ্দিনের নেতৃত্বে অভিজ্ঞ ও তরুণ উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে এবারের প্যানেল গঠন করা হয়েছে, যারা নির্বাচিত হলে যে কোন পরিস্থিতিতে বিজিএমইএ তথা বাংলাদেশের পোশাক খাতকে সমৃদ্ধির পথে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম।
অনুষ্ঠানে মাননীয় সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার, মাননীয় সংসদ সদস্য গাজী মো. শাহনেওয়াজ, বিজিএমইএ-এর সাবেক প্রেসিডেন্ট আনিসুর রহমান সিনহা, ফোরাম-এর প্রেসিডেন্ট আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) এবং ফোরাম-এর প্রধান সমন্বয়ক বেনজীর আহমেদসহ পোশাক কারখানা মালিকরা উপস্থিত ছিলেন।
