করোনায় চট্টগ্রামের পাঁচ লক্ষাধিক বস্ত্র কর্মীদের ভবিষ্যৎ কী…!!!

cepz

করোনার প্রভাবে চট্টগ্রামের দুটি রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (EPZ) ১৫টি তৈরি পোশাক কারখানা ৩০ থেকে ৪৫ দিনের জন্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ ঘোষণার জন্য আবেদন করেছে আরও অর্ধশতাধিক কারখানা।

এছাড়াও, ইপিজেডের বাইরে থাকা আরও শতাধিক পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করায় আতঙ্কে আছেন চট্টগ্রামের প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক শ্রমিক।

চট্টগ্রাম ইপিজেড ও কর্ণফুলী ইপিজেডের তথ্য মতে,  এ পর্যন্ত এ দুটি ইপিজেডের ৭০টির মতো তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধের জন্য আবেদন করেছে। এসব কারখানায় প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক কাজ করছেন। ইতোমধ্যে ১৫টি কারখানাকে বন্ধের জন্য অনুমোদন দিয়েছেন বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ কর্তৃপক্ষ (বেপজা)।

ইপিজেড কর্তৃপক্ষ বলছে, বন্ধের অনুমোদন পাওয়া কারখানার মধ্যে রিজেন্সী গার্মেন্ট লিমিটেড, কেনপার্ক (বিডি) লিমিটেড, ইউনিভোগ গার্মেন্ট কোম্পানি লিমিটেড, নিউ এরা লিমিটেড ও বাংলাদেশ স্পিনার্স অ্যান্ড নীটার্স (বিডি) লিমিটেডসহ বড় পরিসরের কারখানাও রয়েছে।

ইতোমধ্যে এসব কারখানা থেকে শ্রমিকদের মোবাইলে ক্ষুদে বার্তার (SMS) মাধ্যমে বন্ধের বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রিজেন্সী গার্মেন্ট লিমিটেডে থেকে শ্রমিকদের পাঠানো একটি ক্ষুদে বার্তায় বলা হয়েছে, ‘বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত কার্যাদেশ না থাকার পরিপ্রেক্ষিতে কারখানা সমূহ ১২-০৪-২০২০ ইং তারিখ হতে ১১-০৫-২০২০ ইং তারিখ পর্যন্ত লে অফ ঘোষণা করা হলো। লে অফ চলাকালীন কারখানায় উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজন নেই এবং যাবতীয় পাওয়াদি ইপিজেড শ্রম আইন-২০১৯ এর ধারা ১৫ অনুযায়ী যথাসময়ে প্রদান করা হবে।’

কারখানাটিতে কাজ করেন আলমগীর হোসেন নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘হঠাৎ করে কারখানা বন্ধ করায় আমাদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। পরিবার নিয়ে এখন কীভাবে দিনযাপন করব তা বুঝতে পারছি না। এখন আগের চেয়ে প্রায় অর্ধেক বেতন দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব হবে না। কী করবো বুঝে উঠতেও পারছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বন্ধের পরও কারখানা চালু হবে কিনা তা নিশ্চিত না। এখন আতঙ্কের মধ্যে আছি।’

কেনপার্ক (বিডি) লিমিটেড কারখানায় কাজ করেন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আকলিমা খাতুন। তিনি বলেন, ‘কারখানায় কাজ কমে যাওয়ায় বন্ধের ঘোষণা গতকাল মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে তা আমাদের জানিয়ে দিয়েছে। সামনে রমজান ও ঈদ আসছে। এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে জীবন যাপন করবো তা ভাবতে পারছি না।’

বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনের ভিত্তিতেই এসব কারখানা বন্ধের অনুমোদন দিয়েছে বলে দাবি করেছে ইপিজেড কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক খুরশেদ আলম বলেন, ‘ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯ এর ১১ ধারা অনুযায়ী বেপজার অনুমোদন সাপেক্ষে এসব কারখানা লে অফ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিনই অনেক কারখানা লে অফের জন্য আবেদন করছে। তা যাচাই-বাছাই করে সিন্ধান্ত নেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ইপিজেডের দেড় শতাধিক নিবন্ধিত কারখানার মধ্যে ৮-১০টি কারখানা ছাড়া বাকিগুলো লে অফের চিন্তা-ভাবনা করছে। আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করছি।’

উল্লেখ্য, বর্তমানে সিইপিজেডে প্রায় দুই লাখ শ্রমিক কাজ করছেন। এই ইপিজেডে দেশি, বিদেশি ও যৌথ মালিকানায় কারখানা আছে।

একইভাবে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ইপিজেডের ৪১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে বন্ধ ঘোষণার অনুমোদন পেয়েছে। আবেদন করেছে আরও সাতটির মতো প্রতিষ্ঠান। বাকিগুলোও বন্ধের আগ্রহ প্রকাশ করছে বলে জানায় কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ।

কেইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক মহিউদ্দিন বিন মেজবাহ বলেন, ‘এই ইপিজেডে ৪১টি কারখানায় প্রায় ৮০ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। প্রায় সব কারখানা লে-অফ চাচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু কারখানা আবেদন করেছে। আমরা যাচাই-বাছাই করে তা অনুমোদন দিচ্ছি।’

তৈরি পোশাক শিল্পের সংগঠন বিজেএমইএ’র সহ-সভাপতি এ এম চৌধুরী সেলিম বলেন, ‘এখন কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা ছাড়া আমাদের কাছে আর কোনো বিকল্প পথ খোলা নেই। ক্রমেই আমাদের অর্ডার বাতিল হচ্ছে। আবার যারা অর্ডার স্থগিত করছেন তারা কখন পণ্য নিবেন তারও কোনো ঠিক নেই।’

‘ইউরোপে সব শোরুম বন্ধ থাকায় যেসব কাজ শেষ করা হয়েছে তাও বায়াররা নিচ্ছেন না,’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এ মৌসুমের জন্য তৈরি করা পণ্য বিক্রি করতে জন্য আমাদের এক বছর অপেক্ষা করতে হবে। তারপরও বায়াররা পণ্য নিবেন কিনা কিংবা নিলে কি দামে নিবেন তার নিশ্চয়তা নেই। ফলে এর থেকে উত্তরণের জন্যও আমাদের সামনে কারখানা বন্ধ করা ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই।’

সংগঠনটির প্রথম সহ-সভাপতি ও এশিয়ান গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ সালাম বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বই স্থবির হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রামে প্রায় ৪৫০টির মতো কারখানা চালু আছে। এর মধ্যে মাত্র ৫-১০টি কারখানা ছাড়া আর কারও পক্ষেই কাজ না থাকলে এক মাসের বেতন দেওয়াও সম্ভব না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিযোগী দেশ যেমন ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া এখনো তাদের পোশাক কারখানা সচল রাখতে পারছে। যা আমরা পারি নাই। ফলে কিছু অর্ডার সেসব দেশে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

সৌজন্যে: দ্যা ডেইলি স্টার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here